বর্ণনাতীত বিষাদের ঘর
•• অভিজিৎ হালদার
শহরের আলো নিভে গেলে
আমার মনের রাস্তাগুলো আলো জ্বালায়—
সেই আলোয় হাঁটতে হাঁটতে
আমি কেবল তোমার ছায়াকেই খুঁজি।
ঘুমোতে গেলে ঘুম আসে না,
স্বপ্নে তুমি আসো, অথচ মুখ স্পষ্ট হয় না কখনোই।
তুমি একটা অবয়ব হয়ে রয়ে গেছো—
যার ভিতরে আছে ব্যথা, অথচ বাহিরে নেই স্পর্শ।
আমার বুকের ভেতর থেকে
প্রতিদিন কিছু শব্দ ঝরে পড়ে—
তারা কবিতা হতে চায়,
তবে সব কবিতা ব্যর্থ হয়ে যায় তোমার নাম উচ্চারণে।
তোমার নামটা এতটাই গভীরে গেঁথে গেছে
যেমন পাথরের গায়ে লেখা হয় অক্ষর—
জলতল ভেদ করেও যে মুছে না,
সময়ের ঢেউ ফিরেও যায় তাকে স্পর্শ না করেই।
তুমি চলে গেছো—
এ কথা বাস্তব, অথচ অগ্রহণযোগ্য।
কারণ তুমি এখনো আছো প্রতিটি
অপ্রকাশিত ভাবনায়, অপ্রাপ্ত প্রার্থনায়।
আমি জানি না, কেন কিছু মানুষ
এভাবে হৃদয়ে গেঁথে থাকে—
যেন ভালোবাসা নয়,
একটি অভিশাপ, যা থেকে মুক্তি নেই।
তোমার ফেলে যাওয়া চিরুনিটা
আজও আলনায় আছে—
তাতে নেই চুল, তবু আমি ছুঁই—
কেন জানো? কারণ সে একমাত্র তোমার ছোঁয়া বহন করে।
আমার বিছানায় আজও পড়ে আছে
একটি গোলাপরঙ ওড়না—
তোমার ছিলো না, তবু আমি ভেবেছিলাম
এটি কোনো একদিন তোমার কাঁধ ছুঁয়ে যাবে।
তুমি হয়তো অন্য কোথাও সুখী,
হয়তো তুমি ভাবো না এক মুহূর্তের জন্যও আমার কথা
তবু আমি ভাবি, কারণ আমি ভুলিনি,
আর ভুলতে পারাটাই হয়তো আমার ব্যর্থতা।
ভালোবাসা কী শুধু পাওয়ার নাম?
নাকি হারিয়েও বাঁচার একটি ভঙ্গি?
তুমি তো শিখিয়ে দিলে—
যে ভালোবাসা কখনো শেষ হয় না, তবু পূর্ণও হয় না।
আমি এখন সময়ের সাথে কথা বলি,
সে নীরব থাকে,
তার নীরবতায় আমি শুনি
তোমার চলে যাওয়ার শব্দ—প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসে।
আমার আত্মা আজও তোমায় ছুঁতে চায়,
যেন নদী তার নিজস্ব মোহনায় পৌঁছাতে চায়
জানতে জেনেই—
সে মোহনা শুকিয়ে গেছে বহু পূর্বেই।
তুমি কোথাও নেই,
তবু সর্বত্র তুমি—
আমি যেখানে তাকাই,
সেখানে তোমার অনুপস্থিতি গর্জে ওঠে।
তোমার ব্যবহৃত মেঘলা দুপুরগুলি
এখন শুধুই রোদে পুড়ে যায়,
তবু আমি সেই মেঘ খুঁজি
যাতে তুমি হাসতে হাসতে বলেছিলে— ভালোবাসি।
সে শব্দটা এখনো গায়ে লেগে থাকে—
তবে সেটা আর মধুর নয়,
তা এখন এক বিষাক্ত সুগন্ধ,
যা হৃদয়ের সমস্ত কোষে জ্বালাপোড়া জাগায়।
প্রতিটি রাত, প্রতিটি নিঃশ্বাস
এক একটি অমর স্মৃতি বহন করে—
তুমি না থেকেও যেন
আমার অস্তিত্বে স্থায়ী হয়ে আছো।
আমি চাই না তুমি ফিরো,
আমি চাই না তুমি জানো আমার যন্ত্রণা—
শুধু চাই তুমি ঠিকঠাক থাকো—
যদিও জানি, এই ঠিকঠাকের মাঝেই আমি ভেঙে পড়ি।
এই কবিতা শেষ হবে ঠিকই
তবে ভালোবাসা নয়—
কারণ তোমার জন্য আমার যা ছিলো
তা কোনো কবিতার গণ্ডিতে আটকে পড়ে না।
তুমি হয়তো ছিলে আমার ভুল—
কিন্তু সেই ভুলটাই আমার সবচেয়ে প্রিয় সত্য।
আর আমি—
আমি সেই মানুষ, যে ভুলেও তোমাকে ভুলতে পারি না।
কেননা বর্ণনাতীত বিষাদের ঘরে আমি বাস করি অস্তাচল সূর্যের দহনে।।