বেগুনকোদর যাত্রা।।
শুভ রায় ।।
আজ কলেজে গরমের ছুটি পরেছে।
আমি সাথে সাথে ঠিক করে নিলাম এই গরমের ছুটিতে আমি অভিজিৎ
দাদার বাড়িতে বেড়াতে যাবো।
কলেজ শেষ করে আমি বাড়িতে এসে সমস্ত কাজ গুছিয়ে নিলাম।
সব কাজ গোছানো হয়ে যাওয়ার
পর, রাতের খাবার খেয়ে আমি শুয়ে পড়লাম।
আজ রাত্রে মনে হচ্ছে ঘুম হবে না। প্রথম বার দাদার বাড়িতে
যাচ্ছি তো, দাদাকে কোন খবর না দিয়ে।
আমি যদি দাদাকে খবর দিতে
চাই তাহলে আমার যাওয়া আরো চার পাঁচ দিন পিছিয়ে যাবে।
আমি সময় নষ্ট করতে চাই না, তাই
দাদাকে আর জানানো হয় নি।
রাত্রি এখন 12 টা বেজে 10 মিনিট,
আমার চোখে একটুও
ঘুম নেই।
আনন্দে আমার চোখে ঘুম আসছে না। আমি উঠে
বসলাম।
হাত টা
ল্যাম্পের
দিকে বাড়িয়ে
দিলাম এবং ল্যাম্পের আলোর পরিমাণ টা বাড়িয়ে দিলাম।
তারপর এক গ্লাস জল খেলাম, আবার আমি শুয়ে পড়লাম।
এক বার এ পাশ
ঘুরে সুই আবার কিছু ক্ষণ পরে অন্য পাসে ঘুরে সুই
এই করতে করতে কখন যে আমি ঘুমিয়ে পরেছি তা
নিজেও জানি না।
--- হঠাৎ আমার ঘুম
ভেঙ্গে গেলো একটা জড়ালো
আওয়াজে।
আমি লাফ দিয়ে বসে পড়লাম, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ৮ টা বেজে ১০ মিনিট।
আমি উঠে পরলাম আর দুপুর ৩টের সময় বার হতে
হবে।
এবার আমি অনুধাবন করতে শুরু করলাম আওয়াজ টা
কিসের ছিল।
ঘর থেকে বাইরে
বের হতেই দেখলাম দরজার পাশে রাখা ফুলদানি টা নীচে পরে আছে।
আমার আর বুঝতে বাকি থাকলো না যে আওয়াজ টা
কিসের ছিলো।
সকালের খাবার
খাওয়া সেরে এবার আমি আমার জামা কাপড় গোছাতে শুরু করলাম,
জামা কাপড়
গোছানো হয়ে গেলে দীর্ঘ একটা শ্বাস ছাড়লাম।
এবার আমি ঘরে তালা দিয়ে বার হলাম দাদার বাড়ি যাওয়ার
উদ্দেশ্যে।
বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যেই রাস্তাই উঠলাম হঠাৎ
কোথা থেকে একটা কালো বেড়াল এসে আমার রাস্তা কাটলো।
যদিও আমি এই ব্যাপারে বিশ্বাস করি না। তাও
কেনো জানি না আমার গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো।
আমি আবার বাড়ি ফিরে গেলাম ঘরের তালা খুলে
ঠাকুর ঘরে গিয়ে প্রদীপ ধরালাম এবং ঠাকুর কে প্রনাম করলাম।
ও তোমাদের কে তো
বলাই হয় নি আমার বাড়িতে কালী মন্দির আছে।
এবার আমি প্রদীপ
টা নিভিয়ে
আমার ঘরে তালা
দিয়ে বার হলাম স্টেশনের উদ্দেশ্যে।
আমি স্টেশনে
পৌঁছানোর কিছু ক্ষণ পর ট্রেন চলে এলো আমি ট্রেনে চড়ে বসলাম।
আজ কেমন যেন ট্রেন টাও নিরঝুম যাত্রি সংখ্যা
ও কম,
যে কয় জন
যাত্রী আছে তারাও কম কথা বলছে।
আমি সে দিকে
মনোযোগ দিলাম না।
আমি জানালা দিয়ে
বাইরের দিকে তাকিয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য অনুভব করছি।
কোথাও ঘন বন
আবার কোথাও ফাকা ধু ধু মাঠ। এই ভাবে আস্তে আস্তে বাইরে সন্ধ্যা নেমে আসলো।
হঠাৎ করে
ট্রেনের ভেতরের সমস্ত আলো জ্বলে উঠলো।
আমি ট্রেনের
ভেতরের দিকে তাকাতে চমকে উঠলাম।
দেখি আমার সামনের
সিটে কে একজন বসে আছে কেমন ভয়ানক চেহেরা,
সেই ব্যক্তি
আমার দিকে কেমন জিজ্ঞাসার দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে।
আমি তাকে
উপেক্ষা করে চুপ চাপ বসে আছি। তাও সে কেমন এক ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম।
আমি ---- কী
দাদা কোথায় যাচ্ছেন...?
ব্যাক্তি ----
এই যে ট্রেনে চরে যাচ্ছি......
সে ফিস ফিস করে
কী যে বললো ,
আমি ভালো বুঝতে
পারলাম না।
ব্যাক্তি --- কী
ভাই তুমি একা একা কোথায় যাচ্ছ।
আমি --- আমি
যাচ্ছি বেগুন কোদর।
ব্যাক্তি --- সে
খানে কেউ থেকে কী,
কারোর বাড়িতে যাওয়া হচ্ছে কী?
আমি --- হ্যাঁ
সে খানে আমার মাস্তুত দাদা থাকে।
কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর আমি বলে উঠলাম আপনি
আমার দিকে ওই ভাবে তাকিয়ে কী দেখছেন।
ব্যক্তি --- এই
রাত্রের বেলা ফাঁকা রেল গাড়িতে তুমি একা যাচ্ছ তো, তাই সোমা কে দেখছিলাম।
তবে তোমার সাহস
আছে বলতে হয়।
আমি --- হ্যাঁ
যাচ্ছিলাম ,
এখন আপনাকে সাথে
পেয়েছি আপনার সাথে গল্প করতে করতে চলে যাবো।
ব্যাক্তি টা
কেমন হাঁ হাঁ করে হেসে উঠলো। হাসিটা কেমন বিকট লাগলো।
ব্যক্তি --- আমি
তো সামনের স্টেশনে নেমে যাবো। তার পর তো তুমি একা হয়ে যাবে।
এই বার আমার বুকের ভেতর টা ছ্যাত করে উঠলো। ওই ব্যক্তির কথায় আমার কেমন যেনো
ভয় অনুভব হলো।
আমি সাহস দেখিয়ে বললাম একা হলাম তাতে কি হয়েছে, আবার অন্য কেউ যদি ট্রেনে ওঠে তার সাথে গল্প করতে করতে চলে যাবো।
ব্যাক্তি টা কেমন যেনো গোফের তলাই হাঁসি দিলো।
আমি --- আচ্ছা
বেগুনকোদর এখনো কই টা স্টেশন পর।
ব্যক্তি গম্ভীর
গলায় বললো,
আমি যে স্টেশনে
নামবো তার থেকে 7
টা স্টেশন পর।
আমি --- ও আচ্ছা
তা হলে আমার পৌছাতে পৌছাতে অনেক রাত হয়ে যাবে।
ব্যক্তি টা আমার
কথা সুনে
আবার এক বার
বিকট ভাবে হেসে উঠলো।
ব্যক্তির হাসিটা
আমার স্বাভাবিক লাগলো না।
কথা বলতে বলতে
স্টেশন চলে এলো।
ব্যক্তি টা হার
মোড়া দিয়ে উঠে দাড়ালো এবং সাথে সাথে গেটের কাছে গিয়ে দাড়ালো।
কিছুক্ষণ পর ট্রেন থেকে নামতে নামতে বললো ---
সাব ধানে জেও
ওনাদের থেকে একটু সাবধানে থেকো, আবার দেখা হবে।
আমি --- ওনাদের
মানে আপনি কাদের কথা বলছেন.....?
ব্যক্তি ---
আপনি জানেন না বুঝি।
আমি --- না
ব্যক্তি ---
ওনারা মানে চোর,
ডাকাত বা ভূত
বুঝতেই পারছেন।
ট্রেন টা ছেড়ে দিলো। আমি আবার আমার জায়গাতে বসে পরলাম।
আর ওই ব্যক্তির কথা গুলো ভাবতে লাগলাম। এবার
আমার হাত ঘড়ি টার দিকে নজর পরলো,
দেখি তখন 7 টা বেজে 45
মিনিট।
কিছু ক্ষণ চুপ চাপ বসে আছি। আজ যেনো সময়
কাটছে না।
হঠাৎ আমার মনে পরলো ,আমি আসার আগে ব্যাগে একটা বই নিয়েছিলাম।
সেই বই টা ব্যাগ
থেকে বার করলাম এবং পড়া শুরু করলাম, এক মনে বই পরতে লাগলাম।
যখন আমার বই পড়া শেষ হলো তখন ঘড়ির দিকে
তাকিয়ে দেখি 10
টা বেজে 25 মিনিট।
এবার আমার নামার
সময় হয়ে এসেছে। তাই বই টা আবার ব্যাগের মধ্যে গুছিয়ে রাখলাম।
সাথে সাথে
স্টেশনে ট্রেন ঢুকে পরলো।
আমি গেটের কাছে
গিয়ে দাড়ালাম
আর ট্রেনের বগির
চারিদিকে তাকিয়ে দেখলাম,
ট্রেনের এই
বগিতে একমাত্র আমি ছাড়া আর কেউ নেই। এবার আমি স্টেশনে নেমে পরলাম।
ট্রেন টা স্টেশন
ছেড়ে চলে গেলো আমি তো স্টেশন টা দেখে অবাক হয়ে গেলাম।
মাঠের মাঝে একটা
স্টেশন,
স্টেশনে একটা
কেবিন ঘর,
একটা বসার
জায়গা,
স্টেশনের পাশে একটা
বড়ো বট গাছ,
ওই গাছের পাশ
দিয়ে একটা রাস্তা এই রাস্তাই কোন যান বাহন চলে বলে মনে হচ্ছে না।
এখন এই রাস্তায়
কোন যানবাহন নেই তা হলে আমি দাদার কাছে যাবো কী করে !
আপাতত কোনো
রাস্তা নেই,
স্টেশন
মাস্টারের ঘরের দিকে যেতে শুরু করলাম।
ঘরে উঠতেই হঠাৎ একজন বয়স্ক লোক হাতে
হেরিক্যান নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে এলো।
বয়স্ক ব্যক্তি
---- কী হয়েছে এতো রাত্রিতে একা একা এখানে কী করছেন ?
আমি দাদার
ঠিকানা টা দেখিয়ে বললাম এই খানে যাবো !
রাস্তাতে কোন যানবাহন দেখছি না তো আমি হেঁটে
যেতে পারবো কী
?
বয়স্ক ব্যক্তি
একটা বিকট হাসি দিয়ে বললো হেঁটে গেলে আর পৌঁছাতে হবে না।
কথাটি বলে তিনি
কোথায় যেনো চলে গেলো। নিমিষের মধ্যে কোথায় যেনো হারিয়ে গেলো।
হঠাৎ ঘরের ভেতর
থেকে আওয়াজ আসলো - কে....?
সাথে সাথে এক জন
ভদ্রলোক বাইরে বেড়িয়ে এলো,
আমার আর বুঝতে
বাকি নেই এই ভদ্রলোক টি স্টেশন মাস্টার।
তাহলে আগে যার
সাথে দেখা হলো সে কে ছিলো ...?
স্টেশন মাস্টার
বললো কে বাবা তুমি কোথায় যাবে.....?
আমি স্টেশন
মাস্টার কে সব কথা খুলে বললাম।
স্টেশন মাস্টার
বলে উঠলো ও কোনো ব্যাপার না,
উনি এই শ্মশানে
থাকে মাঝে মাঝে এখানে আসে,
তোমার মতো
অনেকেই তাকে দ্যাখে।
আমি বললাম এখানে
শ্মশান কোথায়...?
স্টেশন মাস্টার
বললো এই তো পেলে।
স্টেশন মাস্টার
বলতে লাগলো তাদের আসার সময় হয়েগেছে।
তাদের আসার সময় হয়েগেছে তাই বলতে বলতে
ভেতরে চলে গেলো এবং দরজা আটকে দিলো।
আমার আর কিছু
বুঝতে বাকি নেই।
আমি সোজা
রাস্তাটা ধরলাম এবং জোর পায়ে হাঁটতে শুরু করলাম।
কিছু দুর যেতে
মনে হলো আমার পেছন পেছন কারা যেন আসছে।
আমার আর পেছন
ঘুরে দেখার সাহস হচ্ছে না এবার আমি আরো জোর পায়ে হাঁটা শুরু করলাম।
তারা ও আরো জরে হাটা শুরু করেছে।
আমি দৌড়াতে
শুরু করলাম,
তারাও যেনো
দৌড়াতে শুরু করলো।
আমি দূরে একটা আলো দেখতে পেয়ে মাঠের মধ্যে
দিয়ে আলোর দিকে দৌড়াতে শুরু করলাম।
ধান খেতের মধ্যে
দিয়ে দৌড়াতে শুরু করলাম আর জরে জরে নিশ্বাস ছাড়তে লাগলাম।
আমি দৌড়াচ্ছি
যত তত পথ যেনো বড়ো হচ্ছে পথই যেনো শেষ হচ্ছে না।
আমি প্রায় পৌঁছে গেছি সেখানে এবং সে খানে
কয়েক জন মরা পোড়াতে এসেছে।
তারা আমাকে এই
ভাবে দৌড়ে আসতে দেখে ছুটে পালালো।
আমি ওই স্থানে
গিয়ে অগ্গান হয়ে পরে যায়।
যখন সকালে আমার
হুস আসে তখন আমি দেখলাম আমি দাদার ঘরে শুয়ে আছি।
দাদা আমাকে এক
গ্লাস জল দিয়ে বললো --- কী রে এবার বুঝলি তো বেগুনকোদরে একা একা আসার মজা কী!
তুই আসছিস আমাকে এক বার ও জানাতে পারতিস!
-END-