দ্য ঘোস্ট অফ ওকারিজ ফরেস্ট
-- অভিজিৎ হালদার
আকাশজুড়ে তখন কালো মেঘের আনাগোনা। বাইরে বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ আর তার সঙ্গে গাছের মরা ডাল ভেঙে পড়ার আওয়াজ। ওকারিজ ফরেস্টের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা রেললাইনের ওপর দিয়ে তখন দ্রুত গতিতে ছুটে চলেছে মিডল্যান্ড এক্সপ্রেস। ট্রেনের ভেতরে অল্প কিছু যাত্রী। কেউ বই পড়ছে, কেউবা জানালার বাইরে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। বাইরে অন্ধকার যত বাড়ছে, তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ তত গভীর হচ্ছে।
ট্রেনের কামরায় বসে থাকা বৃদ্ধ জ্যাকেবকে দেখে মনে হচ্ছিল সে যেন গত কয়েক রাত ধরে ঘুমোয়নি। তার পাশে বসে থাকা তরুণী এলেনের দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন, ‘এসব কিছুর জন্যই তুমি দায়ী, এলেন। তুমিই আমাকে এই অশুভ যাত্রা শুরু করতে বাধ্য করেছ।’
এলেন একটু বিরক্ত হয়ে বলল, ‘জ্যাকেব, বাবা আমার, তুমি কি একটু চুপ থাকবে? আমরা এখন যেখানে যাচ্ছি, সেটা আমাদের গন্তব্য নয়। আমাদের গন্তব্যে পৌঁছনোর জন্য এখনও অনেক পথ বাকি।’
জ্যাকেব হতাশভাবে বললেন, ‘অন্ধকার আরও গভীর হচ্ছে। আজ এই রাতে আমাদের ওকারিজ ফরেস্টে থাকতেই হবে। তুমি কি ভুলে গেছো, এলেন, যে ওকারিজ ফরেস্টে রাতে কাউকে থাকতে নেই? রাতের বেলায় এখানে কোনো ট্রেন থামে না, কেউ হাঁটে না, এমনকি কোনো পাখিও ডাকে না। তুমি কি এসব জানো না, এলেন?’
এলেন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ‘জ্যাকেব, বাবা, আমার জন্য কি তোমার ভয় হয়? তুমি ভুলে গেছো যে আমরা কেন এখানে এসেছি? আমি তো আমার মা-বাবার কাছে ফিরে যেতে চাই। তুমি বলেছিলে যে ওকারিজ ফরেস্টের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলা ট্রেনটা সেই পথ দিয়ে যাচ্ছে। বাবা, আমি আমার মা-বাবার কাছে ফিরে যেতে চাই। আমি তোমার কোনো কথা শুনতে চাই না। আমি শুধু আমার মা-বাবার কাছে ফিরতে চাই।’
‘তাহলে এবার তুমি শোনো,’ বলে জ্যাকেব এলেনের দিকে ঘুরলেন। ‘শোনো, ওকারিজ ফরেস্টের গল্পটা কী। এক রাতে এই জঙ্গলে এক ট্রেন এসেছিল। ট্রেনটা এমন সময় এসেছিল, যখন বাইরে ঝড় হচ্ছিল। সেদিন রাতেও ট্রেনটা এভাবে চলতেই থাকে, চলতেই থাকে, যতক্ষণ না ট্রেনটা গভীর জঙ্গলের মধ্যে পৌঁছয়।
হঠাৎ মাঝরাতে ট্রেনটা থেমে যায়। ট্রেনের সবাই আতঙ্কে চিৎকার করতে শুরু করে। তারা ট্রেনের ভেতরেও ভূত দেখতে পায়। তারপর থেকেই যে এই জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে কোনো ট্রেন যায়, সেই ট্রেনটাও থেমে যায়। সেদিন থেকে, যে এই জঙ্গলের মধ্য দিয়ে যায়, সে আর ফিরে আসে না।’
জ্যাকবের কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ট্রেনটি প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দিয়ে থেমে যায়। জানালার বাইরে তাকাতেই দেখা যায়, শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার। ট্রেনের ভেতর তখন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। যাত্রীরা চিৎকার করতে শুরু করেছে। ট্রেনচালক ইঞ্জিন চালু করার চেষ্টা করছেন, কিন্তু ইঞ্জিন চালু হচ্ছে না।
হঠাৎ জ্যাকেব চিৎকার করে বললেন, ‘এলেন, বাইরে তাকিয়ে দেখো।’
এলেন জানালার বাইরে তাকাতেই দেখল, বাইরে থেকে কেউ একজন ট্রেনের দিকে আসছে। তার হাতে একটা হ্যারিকেন। সে হ্যারিকেনটা ধরে আছে। আস্তে আস্তে সেই মানুষটা এগিয়ে আসছে। ট্রেনটা আরও কাঁপতে শুরু করে। যাত্রীরা চিৎকার করতে শুরু করে। জ্যাকেব এলেনের হাত ধরে বলেন, ‘আমরা শেষ হয়ে গেছি। এলেন, আমরা শেষ হয়ে গেছি।’
হঠাৎ সেই মানুষটা ট্রেনের জানালার বাইরে এসে দাঁড়ায়। হ্যারিকেনের আলোয় তার চেহারা দেখা যায়। সেই মানুষটার মুখটা মানুষের মতো নয়, মুখটা এক ভূতের। ভূতের হাতে হ্যারিকেনটা ঘুরছে, আর ঘুরছে। ট্রেনটা আরও কাঁপতে শুরু করে। যাত্রীরা চিৎকার করতে শুরু করে।
জ্যাকেব এলেনের হাত ধরে বলেন, ‘এলেন, ওটা সেই ভূত, যে ট্রেনটাকে আটকে দিয়েছে। ওটা এখন সবাইকে মেরে ফেলবে।’
হঠাৎ ভূতটা হ্যারিকেনটা ট্রেনের জানালার দিকে ধরল। হ্যারিকেনের আগুন থেকে একটা শিখা বেরিয়ে এলো এবং ট্রেনের কামরার ভেতরে ছড়িয়ে পড়ল। যাত্রীরা সবাই পুড়ে মারা গেল। জ্যাকেবও মারা গেলেন।
এলেন চিৎকার করে উঠল, ‘আমি আমার মা-বাবার কাছে ফিরে যেতে চাই।’
তার চিৎকারের পর ট্রেনের কামরায় অদ্ভুত এক নীরবতা নেমে এলো। এলেন তাকিয়ে দেখল, ট্রেনের ভেতরে জ্যাকেব এবং বাকি যাত্রীরা সবাই জীবিত আছে। জ্যাকেব তার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আমি তোমাকে বলেছিলাম, এলেন, যে আমরা শেষ হয়ে গেছি। আমরা এখন একটা ভূতের গল্পে আছি। আমরা এখন ওকারিজ ফরেস্টের ভূতের গল্পে।’
এলেন অবাক হয়ে বলল, ‘আমরা ভূতের গল্পে?’
জ্যাকেব বললেন, ‘হ্যাঁ, আমরা ভূতের গল্পে। আমাদের সামনে এখন শুধু একটাই পথ, সেটা হলো সামনে এগিয়ে যাওয়া।’
এলেন জ্যাকেবের হাত ধরল। তারা দুজনে ট্রেনের দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এলো। বাইরে শুধু অন্ধকার। হ্যারিকেনের আলোয় তারা দেখল, সামনে একটা পথ। সেই পথ ধরে তারা হাঁটতে শুরু করল। তারা হাঁটতে হাঁটতে একসময় একটা বাড়িতে পৌঁছল। সেই বাড়ির ভেতরে আলো জ্বলছিল। তারা বাড়ির ভেতরে ঢুকল।
বাড়ির ভেতরে অনেক মানুষ ছিল। তারা সবাই এলেনকে স্বাগত জানাল। এলেন অবাক হয়ে বলল, ‘তোমরা কারা?’
একজন বৃদ্ধ বলল, ‘আমরা হলাম ওকারিজ ফরেস্টের ভূত। আমরা এখানে বাস করি। আমরা এখানে থাকি। আমরা এখানে আমাদের গল্প বলি।’
এলেন জানতে চাইল, ‘আমরা তাহলে কোথা থেকে এসেছি?’
বৃদ্ধ বলল, ‘তুমি ভূতের গল্প থেকে এসেছো। তুমি আর তোমার বাবা জ্যাকেব, দুজনেই ভূতের গল্পে ছিলে। তোমাদের গল্পটা আজ রাতে শেষ হয়েছে।’
জ্যাকেব বললেন, ‘তাহলে আমরা এখন কোথায়?’
বৃদ্ধ বললেন, ‘তোমরা এখন আমাদের গল্পে।’
এলেন আর জ্যাকেব দুজনেই অবাক হয়ে বৃদ্ধের দিকে তাকিয়ে রইল। তারা দুজন এখন একটা ভূতের গল্পে বাস করছে। তারা এখন ওকারিজ ফরেস্টের ভূতের গল্পে বাস করছে।
জ্যাকেব এবং এলেনার কথোপকথন শুনে বৃদ্ধটি হাসলেন। সেই হাসি ছিল শীতল এবং অস্বাভাবিক। তিনি বললেন, “তোমাদের গল্পটা সত্যিই শেষ হয়েছে। তবে এখন শুরু হবে আমাদের গল্প।”
বৃদ্ধের কথা শেষ হতেই ঘরের ভেতরকার সমস্ত আলো নিভে গেল। এক হাড় কাঁপানো ঠান্ডা স্রোত তাদের দুজনকেই ঘিরে ধরল। তাদের সামনে থাকা অন্যান্য ভূতেরাও একে একে অদৃশ্য হয়ে গেল। এলেনা ভয় পেয়ে জ্যাকেবের হাত শক্ত করে ধরল। জ্যাকেবও বুঝতে পারছিলেন, তারা এমন এক জগতে প্রবেশ করেছে, যেখান থেকে ফিরে আসার কোনো পথ নেই।
চারপাশে তখন শুধু ঘুটঘুটে অন্ধকার। হঠাৎ দূর থেকে একটা আবছা আলো দেখা গেল। সেটা ছিল একটি হ্যারিকেন। হ্যারিকেনটি তাদের দিকেই এগিয়ে আসছিল। এলেনা আঁতকে উঠল, “বাবা, ওটা তো সেই হ্যারিকেন!”
জ্যাকেব ফিসফিস করে বললেন, “হ্যাঁ, এলেনা। ওই হ্যারিকেন দিয়েই সেই ভূত আমাদের মেরেছিল। এখন আমাদেরও তার পরিণতি ভোগ করতে হবে।”
হ্যারিকেনের আলোয় দেখা গেল, একজন লম্বা, কালো ছায়া তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। ছায়াটির কোনো মুখ ছিল না। শুধুমাত্র দুটি জ্বলন্ত চোখের মতো আলো দেখা যাচ্ছিল। সে তাদের দিকে আঙুল তুলে ইশারা করল। সঙ্গে সঙ্গে তাদের দুজনের পায়ের নিচে মাটি সরে গেল। তারা যেন কোনো পাতাল কূপে পড়ে যাচ্ছিল।
পড়ে যাওয়ার সময় এলেনা অনুভব করল, তার শরীরটা হালকা হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ তার মনে পড়ল, তার মা-বাবার কথা। মনে পড়ল সেই রাতের কথা, যখন তারা ট্রেনে যাচ্ছিল। তাদের ট্রেনও সেই ওকারিজ ফরেস্টের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ মাঝরাতে ট্রেনটা থেমে গেল। ট্রেনের ভেতরে হ্যারিকেন নিয়ে এক ভূত প্রবেশ করল। ভূতটি তার মা-বাবাকে মেরে ফেলল। আর সে তখন লুকিয়ে পড়েছিল। জ্যাকেব তাকে খুঁজে বের করে আশ্রয় দিয়েছিলেন।
সবকিছু মনে পড়তেই এলেনা চিৎকার করে বলল, “জ্যাকেব! তুমি আমার বাবা নও। তুমি সেই ভূত, যে আমার মা-বাবাকে মেরেছে!”
জ্যাকেব কোনো উত্তর দিলেন না। হঠাৎ তিনি এক শীতল হাসিতে ফেটে পড়লেন। তার চেহারাটাও বিকৃত হতে শুরু করল। তার চোখ দুটি জ্বলতে শুরু করল। তিনি বললেন, “এলেনা, তুমি এত তাড়াতাড়ি আমাকে চিনে ফেললে! আমি সেই ভূত, যে তোমার মা-বাবাকে মেরেছি। আমি তাদের মেরেছি, কারণ আমি তাদের গল্পটা নিজের করে নিয়েছি। এখন আমি তোমার গল্পটাও নিজের করে নেব।”
জ্যাকেবের কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তারা একটা রেললাইনের উপর এসে পড়ল। তাদের ঠিক সামনেই, একপাশে জ্যাকেব, অন্যপাশে এলেনা। এলেনা দেখল, জ্যাকেব এখন আর মানুষ নন, একটি ভয়ঙ্কর ভূত। তার হাতে সেই হ্যারিকেন। সেই হ্যারিকেনের আলোয় সে এলেনাকে দেখছিল।
এলেনা বুঝতে পারছিল, সে আবারও সেই একই জায়গায় ফিরে এসেছে। সেই রেললাইন, সেই হ্যারিকেন, সেই ভূত। তবে এবার সে একা। সে পালাতে চেষ্টা করল, কিন্তু পারল না। তার পা দুটো যেন মাটিতে আটকে গেছে। ঠিক সেই মুহূর্তে দূর থেকে একটা ট্রেনের হেডলাইট দেখা গেল। ট্রেনটি দ্রুত গতিতে তাদের দিকে এগিয়ে আসছিল। এলেনা চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করল।
জ্যাকেব, এখন ভূত, বললেন, “এলেনা, তুমি তোমার মা-বাবার গল্পে ফিরে এসেছ। আমি তোমাকে মেরে ফেলব। তোমার গল্পও আমার হয়ে যাবে।”
ট্রেনটি তাদের আরও কাছাকাছি চলে এলো। হ্যারিকেনের আলোয় সবকিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ট্রেনটা এসে তাদের দুজনকে ধাক্কা দিল। সবকিছু আবার অন্ধকার হয়ে গেল।
এলেনা যখন চোখ খুলল, তখন সে দেখল, সে ট্রেনের কামরায় বসে আছে। সামনেই বসে আছে জ্যাকেব। তার হাতে বই। এলেনা অবাক হয়ে বলল, “আমরা কোথায়?”
জ্যাকেব হাসিমুখে এলেনাকে বললেন, "আমরা এখন ওকারিজ ফরেস্টের বাইরে।"
এলেনা জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখল, বাইরে কোনো জঙ্গল নেই, আছে একটা পরিত্যক্ত স্টেশনের ভাঙাচোরা প্ল্যাটফর্ম। প্ল্যাটফর্মের এক কোণে একটা হ্যারিকেন জ্বলছে। সেই আলোয় দেখা গেল, একদল মানুষ সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের সবার মুখ ফ্যাকাসে।
জ্যাকেব বললেন, “ওরা তোমার মা-বাবা। ওরা তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছে। ওরা তোমাকে খুঁজছিল।”
এলেনা অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকাল। তার মা-বাবার চেহারাটা অনেক পুরোনো। তাদের পোশাকগুলোও সেকেলে। মা-বাবা দুজনেই তার দিকে হাত বাড়িয়ে ডাকলেন। এলেনা বুঝতে পারছিল না, কী হচ্ছে। সে কি সত্যিই তার মা-বাবার কাছে ফিরে এসেছে?
হঠাৎ ট্রেন থেকে এক ভয়ঙ্কর শব্দ শোনা গেল। ট্রেনের ভেতরের সব আলো নিভে গেল। জ্যাকেবকে আর দেখা গেল না। এলেনা আতঙ্কিত হয়ে জানালার বাইরে তাকাল। দেখল, তার মা-বাবার চেহারা ধীরে ধীরে ভূতের মতো হয়ে যাচ্ছে। তারা চিৎকার করে এলেনাকে বলছে, “এলেনা, তুমিও আমাদের মতো ভূত হয়ে গেছো। তুমিও আমাদের গল্পের অংশ হয়ে গেছো।”
এলেনা ট্রেনের কামরার ভেতর আবার ফিরে এলো। নিজেকে ট্রেনের কামরার ভেতর একা দেখতে পেল। ট্রেনের সব যাত্রীই সেখানে রয়েছে। তবে তারা সবাই হাড়গোড়ের কঙ্কাল।
হঠাৎ এক ঝলক আলোয় সে দেখল, জ্যাকেব সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। জ্যাকেবের মুখ এখন বিকৃত, তার চোখ জ্বলছে। সে এলেনাকে বলল, “আমি তোমাকে বলেছিলাম, এলেনা, যে আমরা শেষ হয়ে গেছি। তুমি তোমার মা-বাবার গল্পে ফিরে এসেছো। তুমিও এখন একটা ভূত। আর আমিও।”
এলেনা চিৎকার করে বলল, “আমি তোমার কথা বিশ্বাস করি না। তুমি আমাকে মেরে ফেলেছ। তুমি আমার মা-বাবাকে মেরে ফেলেছ। আমি তোমাকে পরাজিত করব।”
জ্যাকেব হাসলেন। “আমাকে পরাজিত করবে? আমি হলাম এই ওকারিজ ফরেস্টের অভিশাপ। আমি এই অভিশাপকে এখানে ধরে রেখেছি। এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র পথ হলো—এই অভিশাপটাকে আরও শক্তিশালী করা।”
এলেনা বুঝতে পারল, জ্যাকেব আসলে তার ভিতরের ভয়। জ্যাকেব তার দুঃখ, কষ্ট এবং ভয়কে ব্যবহার করে তাকে এই অভিশাপের মধ্যে আটকে রেখেছে।
হঠাৎ এলেনা চিৎকার করে বলল, "আমি আর ভয় পাই না। আমি আমার মা-বাবার কাছে ফিরে যাবো। আমি তোমাদের মুক্ত করব।"
এলেনার এই কথায় ট্রেনের ভেতরটা কাঁপতে শুরু করল। ট্রেনের সব কঙ্কালগুলো জেগে উঠল এবং জ্যাকেবের দিকে তাকিয়ে রইল। জ্যাকেব আতঙ্কিত হয়ে পিছিয়ে গেল।
এলেনা এক ঝটকায় তার শরীরের বন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত করল এবং এক লাফে ট্রেন থেকে নেমে পড়ল। সে দেখল, প্ল্যাটফর্মে তার মা-বাবার আত্মা দাঁড়িয়ে আছে। তারা এলেনাকে দেখে হাসলেন। তাদের মুখ থেকে আলো বের হচ্ছে।
মা-বাবা বললেন, “এলেনা, তুমি আর ভয় পাও না। তুমি মুক্ত হয়ে গেছো।”
এলেনা তাদের দিকে এগিয়ে গেল। হঠাৎ এক ঝলক আলোয় সব অন্ধকার দূর হয়ে গেল। প্ল্যাটফর্ম, ট্রেন, জ্যাকেব এবং তার মা-বাবা - সবকিছুই অদৃশ্য হয়ে গেল। এলেনা দেখল, সে একটা সবুজ মাঠে দাঁড়িয়ে আছে। তার চারপাশে ফুলের বাগান, পাখির গান। দূরে একটা বাড়ি দেখা যাচ্ছে। সেই বাড়িটা তার মা-বাবার বাড়ি।
এলেনা দৌড়ে সেই বাড়ির দিকে গেল। তার মা-বাবা তাকে স্বাগত জানালেন। তারা এলেনাকে বললেন, “তুমি এখন নিরাপদ। তুমি আর কোনো অভিশাপে আটকে থাকবে না।”
এলেনা তার মা-বাবার সাথে অনেক বছর সুখে-শান্তিতে রইল। তবে মাঝেমধ্যে তার কানে সেই ট্রেনের ইঞ্জিনের শব্দ ভেসে আসত, আর তার মনে পড়ত সেই রাতে দেখা হ্যারিকেন। সে জানত
, সেই ভয় আর আতঙ্ক তার মনের কোনো এক কোণে লুকিয়ে আছে। আর সেই ভয় থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো—ভয়কে ভয় না পাওয়া।