সেই বাড়ি ও রজনী
- অভিজিৎ হালদার
সেটা ছিল ১৯৭৫ সাল। উত্তরবঙ্গের এক প্রত্যন্ত গ্রাম, যার নাম লোকমুখে ফিসফিস করে উচ্চারিত হতো, 'মৃতপুরী'। এই নামের কারণ গ্রামের একপাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ভাঙা, পুরাতন বাড়ি। লোককথা অনুসারে, এই বাড়িতে যে-ই একবার প্রবেশ করেছে, সে আর কখনো জীবিত ফিরে আসেনি। শোনা যায়, বাড়ির চারপাশে এক অদ্ভুত নীরবতা বিরাজ করে এবং দিনের আলোতেও একটা শীতল অনুভূতি চারপাশে ছড়িয়ে থাকে। গ্রামের মানুষ পারতপক্ষে সন্ধ্যার পর ওই রাস্তা এড়িয়ে চলত। কেউ কেউ বলে, রাতের বেলা নাকি বাড়ির ভাঙা জানলা দিয়ে একটা ছায়া নড়াচড়া করে।
এই গ্রামেই থাকত রজনী। গ্রামের সবাই তাকে পাগল বলে ডাকত। কিন্তু সে আসলে পাগল ছিল না। সে ছিল গ্রামের সবচেয়ে সাহসী এবং কৌতূহলী মানুষ। গ্রামের এই কুসংস্কার সে মানতে পারত না। তার মতে, এই গল্পগুলো কেবলই বয়স্কদের বানানো আতঙ্ক। সে এই রহস্য উন্মোচন করতে চেয়েছিল। একদিন সূর্যাস্তের ঠিক আগে রজনী সেই বাড়ির দিকে রওনা হলো। গ্রামের মানুষ তাকে বারণ করেছিল, কিন্তু সে কারো কথা শুনল না। সে হাতে একটা টর্চ আর একটা পুরনো ম্যাপ নিয়ে বাড়ির প্রধান গেটের সামনে পৌঁছাল। গেটের ভাঙা কপাটটা একটা মৃদু আওয়াজ করে খুলে গেল। রজনী ভেতরে প্রবেশ করল। ভেতরে ঢুকতেই তার মনে হলো বাতাসটা ভারী হয়ে গেছে। ঠান্ডা একটা অনুভূতি তার মেরুদণ্ড দিয়ে নেমে গেল। বাতাস যেন থমকে আছে। চারপাশে কেবল লতাপাতা আর স্যাঁতসেঁতে দেওয়ালের গন্ধ। সে প্রথম ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। কিন্তু যেই সে ঘরের চৌকাঠ পার হলো, তার টর্চের আলোটা কেঁপে উঠল আর তার হাতে থাকা ম্যাপটা মাটিতে পড়ে গেল।
রজনী নিচু হয়ে ম্যাপটা তুলতে গেল। হঠাৎ তার মনে হলো কেউ যেন তার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। সে দ্রুত পেছনে তাকাল। কিন্তু কেউ ছিল না। একটা শুকনো পাতার আওয়াজ ছাড়া আর কোনো শব্দ ছিল না। এই নীরবতা তাকে আরও বেশি অস্বস্তিতে ফেলে দিল। সে দ্রুত পা চালিয়ে ভেতরের দিকে হাঁটা শুরু করল। বাড়িটা যতটা বাইরে থেকে ছোট মনে হয়েছিল, ভেতর থেকে যেন তার থেকেও অনেক বড়। একটা করিডর ধরে সে হেঁটে যাচ্ছিল, কিন্তু করিডরটা যেন শেষই হচ্ছিল না। সামনে একটি খোলা দরজা দেখে সে সেই দিকে এগিয়ে গেল। দরজাটা পার হয়ে সে একটা বিশাল ঘরে প্রবেশ করল। ঘরটা খুব অন্ধকার ছিল। হঠাৎ তার পেছনে দরজাটা বিকট আওয়াজ করে বন্ধ হয়ে গেল। আর একটা ফিসফিস শব্দ যেন বলল, "তুমি চলে এসেছো।" ভয়ে রজনীর শরীর জমে গেল। সে তার টর্চ দিয়ে চারপাশ দেখতে শুরু করল। কোনো মানুষ ছিল না। হঠাৎ একটা অশরীরী ছায়া তার দিকে এগিয়ে এল। রজনী চোখ বন্ধ করে ফেলল, তার মনে হচ্ছিল তার হৃৎপিণ্ড গলা দিয়ে বেরিয়ে আসবে। পরমুহূর্তে একটা ঠান্ডা হাত তার কাঁধে স্পর্শ করল এবং একটা বিকৃত হাসি শুনতে পেল।
রজনীর জ্ঞান ফিরল যখন, সে দেখল সে মাটির ওপর শুয়ে আছে। তার শরীরটা ভীষণ ভারী লাগছে, যেন হাজার বছরের পুরনো পাথরের মূর্তি। কোনোমতে সে চোখ মেলে দেখল, সে সেই একই ঘরে শুয়ে আছে। কিন্তু এবার ঘরটা আগের মতো অন্ধকার নয়। বাইরে থেকে চাঁদের আলো জানালা দিয়ে ঘরের ভেতর এসে পড়েছে। বাতাসে একটা স্যাঁতসেঁতে গন্ধ। দেওয়ালে আঁকা কিছু অস্পষ্ট ছবি তার চোখে পড়ল। সে উঠে বসতে গেল, কিন্তু পারল না। তার হাত-পা অবশ হয়ে গেছে। একটা ঠান্ডা বাতাস তার শরীর ছুঁয়ে গেল। রজনী বুঝতে পারল, সে আর একা নেই। তার চোখের সামনে একটা অশরীরী ছায়া ভেসে উঠল। ছায়াটা ধীরে ধীরে একটা মানুষের রূপ ধারণ করল, কিন্তু তার চোখগুলো ছিল ফাঁকা আর কালো। সে একটা বিকৃত হাসি হাসল। রজনী আতঙ্কিত হয়ে উঠল। সে কোনো আওয়াজ করতে পারল না। ছায়াটা তার দিকে এগিয়ে এল। রজনীর বুক ধড়ফড় করতে লাগল। সেই ছায়া তার গলা টিপে ধরল। সে শ্বাস নিতে পারল না। অন্ধকার তার চোখ ঢেকে ফেলল। রজনী মারা গেল। তার দেহটা ঠান্ডা হয়ে মেঝেতে পড়ে রইল, আর তার আত্মা সেই ছায়ায় মিশে গেল।
অন্যদিকে, বহুদূর এক গ্রামে, যেখানে নদী আর বনের ধার দিয়ে হেঁটে গেলে এক শান্ত কুটির পাওয়া যায়, সেখানে থাকতেন এক রহস্যময় সন্ন্যাসী। তার নাম ছিল মহাদেব। মহাদেবের কাছে এক অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল। তিনি যদি কোনো সদ্য মৃত মানুষের মাথায় হাত রাখতেন, তবে সেই মানুষটি আবার জীবন ফিরে পেত। তার এই ক্ষমতার কথা খুব বেশি মানুষ জানত না। কারণ তিনি লোকচক্ষুর আড়ালে থাকতেন। তিনি কেবল সেই মানুষদের সাহায্য করতেন যারা প্রাকৃতিক কারণে মারা গেছে, যেমন কোনো দুর্ঘটনা বা অসুস্থতা , কোনো খুন বা অপঘাতে মারা যাওয়া মানুষকে তিনি সাহায্য করতেন না।
একদিন মহাদেব তার কুটিরে বসে ধ্যান করছিলেন। হঠাৎ তার মনে হলো যেন দূর থেকে একটা চিৎকার ভেসে আসছে। তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় তাকে ইঙ্গিত দিল যে কোনো এক অশুভ শক্তি অনেক দূরে জেগে উঠেছে। তিনি চোখ খুলে বসলেন। তার মনে হল, কিছু একটা ভুল হচ্ছে। তিনি চোখ বন্ধ করে দূর-দূরান্তের খবর জানতে চাইলেন। তিনি দেখতে পেলেন, একটি ছেলে মারা গেছে এবং তার আত্মা একটি অন্ধকার শক্তির কবলে পড়েছে। তিনি দেখলেন, এই শক্তিটি অনেক শক্তিশালী এবং পুরনো। তিনি বুঝলেন এই শক্তিকে থামাতে হবে, না হলে এটি অনেক মানুষের ক্ষতি করবে। পরমুহূর্তেই তিনি বুঝতে পারলেন, এই ছেলেটি সেই বাড়িটার কাছে মারা গেছে। যে বাড়িটার কথা তিনি ছোটবেলায় শুনেছিলেন, কিন্তু কখনো বিশ্বাস করেননি।
মহাদেব তার সমস্ত সরঞ্জাম গুছিয়ে নিলেন। একটি ঝোলাতে কিছু ভেষজ, একটি রুদ্রাক্ষের মালা আর কিছু পুরনো পুঁথি ভরে নিলেন। তিনি তার গুরুর কথা মনে করলেন, যিনি তাকে বলেছিলেন এই পৃথিবীতে এমন কিছু শক্তি আছে, যা মানুষের কল্পনার বাইরে। তিনি মহাদেবকে সাবধান করে বলেছিলেন, এই শক্তিগুলোর সাথে তিনি যেন কখনো না জড়ান। কিন্তু মহাদেব বুঝতে পারলেন, এই ঘটনাটা শুধু রজনীর মৃত্যুর ঘটনা নয়, এটা একটি বৃহত্তর অমঙ্গলের ইঙ্গিত। এই অশুভ শক্তিকে রুখতে না পারলে এটি সমগ্র মানবজাতির জন্য বিপদ ডেকে আনবে।
পরের দিন সূর্য ওঠার আগেই মহাদেব তার যাত্রা শুরু করলেন। তিনি গ্রামের রাস্তা ধরে হেঁটে চললেন। তার যাত্রা ছিল দীর্ঘ এবং কঠিন। রাস্তা ছিল এবড়োখেবড়ো। তিনি অনেক পথ ধরে হেঁটে চললেন। নদীর ধার দিয়ে, বন দিয়ে, পাহাড় দিয়ে। তিনি বুঝতে পারছিলেন যে তিনি যত দূরে যাচ্ছেন, ততই বাতাস ভারি হচ্ছে। অদ্ভুত একটা ঠান্ডা অনুভূতি তার চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে। তিনি বুঝতে পারলেন, তিনি সঠিক পথেই আছেন। যখন তিনি রজনীর গ্রামের কাছে পৌঁছালেন, তখন সূর্য প্রায় অস্তাচলে যাচ্ছে। তিনি গ্রামের মানুষদের সাথে কথা বললেন। গ্রামের মানুষ তাকে সেই অভিশপ্ত বাড়ির কথা বলল। তারা বলল যে এই বাড়িতে যে-ই প্রবেশ করেছে, সে আর জীবিত ফিরে আসেনি। মহাদেব মনোযোগ দিয়ে তাদের কথা শুনলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, "সম্প্রতি কি কেউ এই বাড়িতে প্রবেশ করেছে?" একজন বৃদ্ধ মানুষ উত্তর দিলেন, "হ্যাঁ, একজন যুবক, যাকে আমরা পাগল বলে ডাকতাম, সে গতকাল সন্ধ্যায় এই বাড়িতে প্রবেশ করেছে। কিন্তু সে আর ফিরে আসেনি।"
মহাদেব বুঝলেন, সেই যুবকটি রজনী। তিনি বৃদ্ধকে রজনীর সম্পর্কে আরো কিছু জিজ্ঞেস করলেন। বৃদ্ধ বললেন, রজনী এই গ্রামের একজন সাহসী এবং কৌতূহলী যুবক ছিল। সে কখনোই এসব কুসংস্কারে বিশ্বাস করত না। মহাদেব বুঝলেন, রজনীর মতো একজন সাহসী যুবককে সেই বাড়িতে পাঠানো হয়েছে, যাতে সে এই অভিশপ্ত বাড়ির রহস্য উন্মোচন করতে পারে। মহাদেব গ্রামের মানুষের কাছে জানতে পারলেন, সেই বাড়িতে পৌঁছানোর একমাত্র রাস্তাটা গ্রামের বাইরে দিয়ে যায়। তিনি গ্রামের মানুষদের বললেন, "আমি সেই বাড়িতে যাবো। আমি সেই যুবকের আত্মাকে উদ্ধার করতে চাই।" গ্রামের মানুষ তাকে বারণ করল, কিন্তু তিনি শুনলেন না। তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন। সূর্য পুরোপুরি অস্ত গেল, চারিদিক অন্ধকার হয়ে গেল। মহাদেব একাই সেই অভিশপ্ত বাড়ির দিকে রওনা হলেন।
মহাদেব যখন সেই বাড়ির গেটের সামনে পৌঁছালেন, তখন বাতাস যেন থমকে আছে। গেটের ভাঙা কপাটটা একটা অদ্ভুত শব্দ করে খুলে গেল। মহাদেব ভেতরে প্রবেশ করলেন। তার হাতে থাকা টর্চটা জ্বলছিল। তিনি ভেতরে ঢুকলেন। ভেতরের বাতাসটা ভারী আর স্যাঁতসেঁতে। তিনি ধীরে ধীরে বাড়ির ভেতরের দিকে হাঁটতে শুরু করলেন। তিনি অনুভব করলেন, চারপাশে অনেক অশরীরী আত্মার অস্তিত্ব আছে। প্রতিটি আত্মা যেন তাকে বাধা দিচ্ছে, তাকে ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। কিন্তু মহাদেবের মন ছিল স্থির। তিনি এক মন্ত্র জপ করতে লাগলেন, যাতে তার চারপাশে একটা সুরক্ষা বলয় তৈরি হয়।
তিনি যেই ঘরে রজনী মারা গিয়েছিল, সেই ঘরে পৌঁছালেন। তিনি দেখতে পেলেন, রজনীর দেহ মেঝেতে পড়ে আছে। তার দেহটা ঠান্ডা আর নিথর। মহাদেব রজনীর পাশে বসলেন। তিনি দেখলেন, তার শরীরের পাশে একটি অশরীরী ছায়া নড়াচড়া করছে। মহাদেব বুঝলেন, এটাই সেই অশুভ শক্তি, যা রজনীকে মেরে ফেলেছে। তিনি সেই ছায়াকে জিজ্ঞেস করলেন, "তুমি কে?" সেই ছায়াটি বিকৃত হাসিতে হাসতে লাগল। মহাদেব আবার জিজ্ঞেস করলেন, "তুমি কেন এখানে এত মানুষকে হত্যা করেছ?" ছায়াটি তখন একটা বিকৃত রূপ ধারণ করল। তার চোখগুলো কালো এবং ফাঁকা, মুখ থেকে একটা ভয়ংকর বিকৃত হাসি বেরিয়ে আসছিল। সেই হাসিটা বাড়ির চারপাশে প্রতিধ্বনিত হতে লাগল।
মহাদেব তার ঝোলা থেকে একটি রুদ্রাক্ষের মালা বের করলেন। তিনি সেই মালা দিয়ে একটি মন্ত্র জপ করতে লাগলেন। মন্ত্রের আওয়াজটা সেই অশুভ শক্তিকে আঘাত করতে লাগল। সেই ছায়াটি চিৎকার করতে লাগল, যেন মন্ত্রের আওয়াজটা তার জন্য অসহ্য। ছায়াটি দ্রুত মহাদেবের দিকে এগিয়ে এল। তার লম্বা, ধারালো নখ দিয়ে মহাদেবকে আঘাত করতে চাইল। কিন্তু মহাদেবের মন্ত্রের সুরক্ষা বলয় তাকে রক্ষা করল। মহাদেব চোখ বন্ধ করে ধ্যান করতে লাগলেন। তার শরীরের চারপাশে একটা উজ্জ্বল আলো ফুটে উঠল। সেই আলোটা সেই অশুভ শক্তিকে আঘাত করতে লাগল। সেই ছায়াটি চিৎকার করতে লাগল, যেন তার অস্তিত্ব বিপন্ন। সে বুঝতে পারল, এই সন্ন্যাসী তার থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী। সে দ্রুত পিছিয়ে গেল।
সেই অশুভ শক্তি চিৎকার করতে লাগল, "আমাকে ছেড়ে দাও! আমি তোমার কোনো ক্ষতি করব না!" মহাদেব চোখ খুললেন এবং বললেন, "তুমি অনেক মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছ। এখন তোমাকে এই স্থান ত্যাগ করতে হবে। তোমার কোনো অধিকার নেই এখানে থাকার।" অশুভ শক্তিটি তখন বলল, "আমি এই বাড়ির আসল মালিক! এই বাড়ি আমার। আমি এই বাড়িকে অভিশাপ দিয়েছি।" মহাদেব তাকে জিজ্ঞেস করলেন, "তুমি কে? কেন তুমি এই অভিশাপ দিয়েছ?"
অশুভ শক্তিটি তখন তার গল্প শোনাল। সে বলল, সে এই বাড়ির এক সময়ের একজন সন্ন্যাসী ছিল, তার নাম ছিল হরিদাস। তার কাছে অনেক অলৌকিক ক্ষমতা ছিল। কিন্তু সে ক্ষমতার জন্য অহংকারী হয়ে গিয়েছিল। সে তার ক্ষমতাকে মানুষের ভালোর জন্য ব্যবহার করত না, বরং নিজের স্বার্থের জন্য ব্যবহার করত। তার গুরুর কাছে যখন এই খবর পৌঁছাল, তখন তিনি তাকে এই ক্ষমতার অপব্যবহারের জন্য অভিশাপ দেন। অভিশাপের ফলে হরিদাস একটা অশুভ শক্তিতে পরিণত হয়। সে এই বাড়িতে আটকা পড়ে। সেই থেকে সে এখানে কোনো মানুষকে জীবিত থাকতে দেয় না।
মহাদেব বুঝলেন, এই অশুভ শক্তিকে মুক্তি দিতে হবে। তিনি তার পুঁথি বের করলেন এবং একটি বিশেষ মন্ত্র পাঠ করতে লাগলেন। মন্ত্রটি খুব শক্তিশালী ছিল। মন্ত্রের প্রভাবে সেই অশুভ শক্তি দুর্বল হতে লাগল। সেই ছায়াটি ছোট হতে শুরু করল, আর তার বিকৃত রূপটা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে লাগল। কিছুক্ষণ পর সেই ছায়াটা একটা মানুষের রূপে পরিণত হলো, যার নাম হরিদাস। সে মহাদেবের কাছে ক্ষমা চাইল। মহাদেব তাকে বললেন, "তুমি এখন মুক্ত। তুমি তোমার কর্মের ফল পেয়েছ। এখন তুমি শান্তির পথে যাও।" হরিদাস মহাদেবকে প্রণাম করে আলোতে মিশে গেল।
এরপর মহাদেব রজনীর কাছে গেলেন। তিনি রজনীর মাথায় হাত রাখলেন এবং তার মন্ত্র পাঠ করতে লাগলেন। মহাদেবের ক্ষমতার কারণে রজনীর দেহে আবার জীবন ফিরে এল। সে চোখ খুলল। মহাদেব তাকে বললেন, "তুমি এখন সুস্থ। তুমি বাড়ি ফিরে যাও। তোমার গ্রাম আর এই বাড়ি এখন অভিশাপমুক্ত।" রজনী অবাক হয়ে মহাদেবকে জিজ্ঞেস করল, "আপনি কে?" মহাদেব মৃদু হাসলেন। রজনী দেখল, মহাদেব ধীরে ধীরে বাড়ির বাইরে চলে যাচ্ছেন। তার যাওয়ার পথে রজনী দেখল, অনেক আত্মা মহাদেবকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে। রজনী উঠে বসল। সে দেখল, সূর্যের প্রথম আলো বাড়ির ভেতরে এসে পড়েছে। সেই পুরনো বাড়িটা আর অন্ধকার নয়। যেন নতুন করে জীবন ফিরে পেয়েছে। রজনী সেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে গ্রামে ফিরে গেল। তার মুখে একটা মৃদু হাসি। সে বুঝল, তার জীবনের একটি বড় অধ্যায় শেষ
হয়েছে। আর এর শুরুটা ছিল সেই বাড়িটার রহস্য উন্মোচন দিয়ে।