কাম্য জনসংখ্যা (Optimum Population)
কোন দেশে মোট জনসংখ্যা যদি সেই দেশে কার্যকর জমি বা সম্পদের অনুপাতে বেড়ে ওঠে তাহলে জনসমষ্টির এই সুষম অবস্থাকে কাম্য জনসংখ্যা বা অপটিমাম পপুলেশন বলে । অর্থাৎ কাম্য জনসংখ্যা হল প্রাকৃতিক পরিবেশের সাংস্কৃতিক পরিবেশ ও মানুষের আদর্শ অনুপাত ।কাম্য বা আদর্শ জনসংখ্যার ধারণা জমির ভৌগোলিক অবস্থান জমির কার্যকারিতা সম্পদের উপযোগিতা ও জনগণের সাংস্কৃতিক মানের উপর নির্ভর করে তবে ভূমি বা সম্পদের কার্যকারিতা মানুষের সাংস্কৃতিক অবস্থান ও কালভেদের আবেগকে নিয়ন্ত্রিত করে।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক জিয়ারম্যান( ১৯৫১) বলেন কাম্য জনসংখ্যা সরল তম সংজ্ঞা বোধ হয় আদর্শ মানুষ জমি অনুপাত। কোন দেশে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক ও মানবিক সম্পদের পরিপূর্ণ ও উপযুক্ত সর্বাধিক ব্যবহারের মাধ্যমে যে পরিমাণ জনসংখ্যার মাথাপিছু উৎপাদন ও আয় সর্বোচ্চ হয় চরমতম উচ্চ মানের জীবনযাত্রা সুনিশ্চিত করা যায় ও সর্বাঙ্গীর স্বাচ্ছন্দ্য প্রদান করা যায় সেই নির্দিষ্ট পরিমাণকে জনসংখ্যা আদর্শ জনসংখ্যা বলে। অধ্যাপক এডউইন ক্যানান কাম্য জনসংখ্যা তত্ত্বের প্রবক্তা।
উদাহরণ:- বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশ তথা ইউরোপের জার্মানি স্পেন ফ্রান্স বেলজিয়াম নেদারল্যান্ড ইতালি এবং যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা।
কাম্য জনসংখ্যা কে তিনটি অবস্থানের সাথে যুক্ত করা যায় । যথা-
১. কাম্য জনসংখ্যা যেখানে মোট সর্বাধিক উৎপাদনের সঙ্গে সম্পর্কিত।
২. কাম্য জনসংখ্যা যেখানে মাথাপিছু গড় উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
৩. যে জনসংখ্যায় গড় উৎপাদন নিম্নতম জীবিকার সত্ত্বার সঙ্গে সমান।
*পৃথিবীর যে সমস্ত অঞ্চলে জনসংখ্যা আদর্শ স্থানীয় বা কাম্য নয় অর্থাৎ মানুষ ভূমির ভারসাম্য যেখানে বিঘ্নিত সেই স্থানে দুটি ভিন্ন ধরনের অনুপাত লক্ষ্য করা যায়। যথা-
ক. অতিজনাকীর্ণতা
খ. স্বল্পজনাকীর্ণতা বা জনবিরল অবস্থা
*ক. অতিজনাকীর্ণতা:-
প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যার আধিক্যকে অতি জনাকীর্ণতা বা ওভারপপুলেশন বলে।
*খ. স্বল্পজনাকীর্ণতা বা জনবিরল অবস্থা:-
প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যার অপ্রাচুর্যতাকে জনসংখ্যা বিরলতা বা আন্ডার পপুলেশন বলে।
জন বিরলতাবাদ স্বল্প জনসংখ্যা কে দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়। যথা -১.অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর জনবিরল অবস্থা । ২.আর্থসামাজিকভাবে উন্নত জনবিরল অবস্থা।
কাম্য জনসংখ্যার বৈশিষ্ট্য:-
১.জমি:-
জমি দৈর্ঘ্য প্রস্থ ও উৎপাদন ক্ষমতাযুক্ত আদর্শ ত্রিমাত্রিক হয়ে থাকে জমির গুণগতমান জনসংখ্যার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।
২. জনসংখ্যার অবস্থা:-
এক্ষেত্রে কার্যকর জমির সঙ্গে জনসংখ্যার সম্পর্ক সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে জনসংখ্যা সর্বদা আদর্শ স্তরে থাকে। তাই আদর্শ মানুষ জমি অনুপাত হলো গ্রাম্য জনসংখ্যা।
৩. গুনগত সম্পর্ক:-
কাম্য জনসংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যা ও মোট কার্যকরী জমির আদর্শ গুণগত সম্পর্ক নির্দেশ করে থাকে।
৪. আর্থিক অবস্থা:-
কাম্য জনসংখ্যা দেশের প্রকৃত সম্পদের পূর্ণ সদ্ব্যবহার সম্ভব হয় সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটে এবং দেশের আর্থসামাজিক ও জীবনযাত্রার উন্নয়ন ঘটে।
৫. জমির উপর চাপ:-
এক্ষেত্রে দেশে জমির উপর মোট জনসংখ্যা চাপ আদর্শ স্তরে থাকে , জনসংখ্যা বেশি হলে অতি জনাকীর্ণতার অবস্থার সৃষ্টি হয় আর জনসংখ্যা কম হলে জনস্বল্পতা সৃষ্টি হয়।